শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
মোঃ রেজাউল করিম রেজা, ময়মনসিংহ : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের বাগান মহাসড়ক ঘেঁষে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি রাতের আঁধারে ভরাট করে মোমেনশাহী ফিলিং স্টেশন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সওজ ও পরিবেশ অধিদপ্তর জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠালেও তাতে কর্ণপাত করেননি ওই ব্যক্তি। ময়মনসিংহের ভালুকার প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। চাপের মুখে দিনের বেলায় কাজ বন্ধ রাখলেও এখন রাতের আঁধারে ট্রাক দিয়ে বালু ফেলে প্রায় ৫০ শতক জায়গা ভরাট করা হচ্ছে বলে জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল বাগান ঘেঁষা এলাকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মোমেনশাহী ফিলিং স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে প্রস্তাবিত ফিলিং স্টেশনের মধ্যে একটি সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। এতে লেখা আছে মোমেনশাহী ফিলিং স্টেশন। সাইনবোর্ডের সামনের পুরো জায়গাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সওজ কর্তৃপক্ষ বলছেন মহাসড়কের পাশের এই জমিতে ১০ লেনের কাজ চলবে। মোমেনশাহী ফিলিং স্টেশনের মালিক নুর হোসেন ও ভালুকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ যৌতভাবে এই কাজ করছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের পত্রে উল্লেখ করা হয় এই জমিতে মহাসড়কের ১০ লেনের কাজ চলবে।
জানাগেছে, মোমেনশাহী ফিলিং ষ্টেশন কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে নুর হোসেন আব্দুল রশিদের নিকট বিক্রি করে দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সওজ বিভাগ, ময়মনসিংহ উপ- নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোফা্খারুল ইসলাম প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, “সওজের জায়গা দখলকারী নুর হোসেনকে এরই মধ্যে উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নিজ থেকে সরে না গেলে শিগগিরই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা মামলা করে দেব। কোনো দখলকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি প্রতিদিনের কাগজকে জানান, আব্দুল রশিদ জমি ভাড়া নিয়ে ফিলিং স্টেশনের কাজ করছে। এখানে স্থানীয়দের কিছু জমি দখল করেও নিয়েছে। যেকোন সময় দাঙ্গা হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে দখলের অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে এক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও নুর হোসেন ও আব্দুর রশিদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। সোমবার দুপুরে কথা বলতে চেয়ে তার কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।স্থানীয়ভাবে পরিচিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার চার ব্যক্তি জানান, বাগান এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে সওজের বড় আয়তনের সম্পত্তি রয়েছে। নুর হোসেন ও আব্দুর রশিদ যেখানে ভরাট কাজ চালাচ্ছেন পাশে তার ১২ শতক ভাড়া জমি রয়েছে। সাইনবোর্ডটি তিনি নিজের জায়গায় লাগিয়ে পাশের সওজের জমি মহাসড়ক ঘেঁষে ভরাট করছেন। বিষয়টি জানার পর সওজ কর্মকর্তারা গিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় সেখানে কাজ বন্ধ করার মৌখিক বলে আসেন । সওজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে কাজ বন্ধ করতে নুর হোসেনকে নোটিশ দেন।
এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, নুর হোসেন ও আব্দর রশিদ জোর করে সওজের জায়গা দখল করে ফিলিং স্টেশনের নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । তিনি মহাসড়কের পাশের কয়েকটি গাছও কেটে ফেলছেন। এভাবে গাছ কেটে ফেলা পরিবেশের ক্ষতির কারণ। সওজ ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তাকে নোটিশ করলেও এসবের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না তিনি। ভালুকা উপজেলা সীডস্টোরে আরেকটি ফিলিং স্টেশনের মালিক আব্দুর রশিদ । সেখানেও মহাসড়কের জায়গা দখল করে ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করেছেন। প্রভাবশালী নুর হোসেন ও আব্দুর রশিদ কোনো দপ্তর থেকে অনুমুতি বা ছাড়পত্র না পেয়ে সওজের কয়েক কোটি টাকার মূল্যের জমি দখল করে ফিলিং স্টেশনের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । ত্রিশালের বাগানের বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, “যিনি (নুর হোসেন ) তার কোন জমি নেই। আব্দুর রশিদ ফিলিং স্টেশন করতে চান এখানে। ৫ বছরের চুক্তি (ভাড়া) জমি আছে মাত্র ১২ শতক। বাকি সম্পত্তি সড়ক বিভাগের। সড়ক বিভাগের ৫০ শতকের বেশি জমি দখল করতে এরই মধ্যে বালু ফেলে ভরাটের প্রায় কাজ করে ফেলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ – নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার বলেন, “সরকারিভাবে সওজের জমিতে কাজ করাই নিষেধ। তারপর ওই ব্যক্তি সওজের সরকারি জায়গা দখল করে ফিলিং স্টেশন বানাচ্ছেন, যা আইন ও নিয়ম বহির্ভূত। ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী দ্রুত বন্ধ না করলে এবিষয়ে উচ্চ আদালতের নজরে আনা হবে। ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল আহমেদ জানান, কোথায় নির্মাণ করছে আমি জানিনা। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।“এরই মধ্যে অনেক জায়গায় সড়ক ঘেঁষে ভরাট করে ফেলেছে ভূমিখেকো আব্দুর রশিদ । সরকার চেষ্টা করেও সেই জায়গাগুলো উদ্ধার করতে পারছে না। এতে পরিবেশের উপর দিন দিন বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এসব জায়গা উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।